সাক্ষাৎকার ।। একজন যাজকের অনুপ্রেরণামূলক কিছু কথা

জীবন ও সমাজ ডেস্ক:  ফাদার টেরেন্স রড্রিক্স। তিনি চট্টগ্রাম মহা-ধর্মপ্রদেশের একজন ধর্মপ্রদেশীয় যাজক। যাজকীয় জীবনের ২৫ বছরের পূর্তি উদযাপন করে বর্তমানে ২৭ বছরে পদার্পণ  করেছেন। সেবার জীবন বেছে নিয়েছেন আর খ্রিস্টমণ্ডলীতে যিশুর অনুসারী হয়ে সেবারত আছেন। গত ২২ মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম মহা-ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেল হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তার এই গুরুদায়িত্বের জন্য আমরা তাকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই। উল্লেখ্য, ভিকার জেনারেল হিসেবে বিশপের সহায়ক হয়ে তার প্রতিটি কাজ যেন পবিত্র আত্মার দ্বারা পরিচালিত হয়, সেই প্রার্থনা রাখি আমরা। বিশপকে তার পালকীয় কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করতে, দাপ্তরিক, বাণীপ্রচার, সাক্রামেন্তীয় কাজ এবং জনগণকে ঈশ্বরের পথে নিয়ে আসায় সৃষ্টিকর্তা তাকে সু-স্বাস্থ্য দান করুক।


বয়সে যথেষ্ট পরিপক্ক ও যাজকীয় জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায় প্রাজ্ঞ এই যাজকের অনুপ্রেরণামূলক কিছু কথা তুলে এনেছেন জীবন ও সমাজ। তার সাথে আলাপচারিতা করে আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি কিছু বিষয় যা আমাদের কারো না কারো জীবনের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ও আমাদের সমাজের কোন কোন না কোন দিকের জন্য ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। জীবন ও সমাজ প্রতিনিয়ত চায় মানুষের জীবন ও সেই মানুষের সমাজের জন্য ইতিবাচক বিষয়াদি তুলে ধরতে। আসুন, অনুপ্রেরণামূলক সেই বক্তব্য জেনে নিই। 







প্রশ্ন : নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই আপনাকে। যাজকীয় জীবনের ২৫ বছর পূর্তি পালন করে বর্তমানে ২৭ বছরে আছেন। আপনার যাজকীয় জীবন নিয়ে কিছু জানতে চাই। এছাড়াও, সম্প্রতি নতুন একটি গুরুদায়িত্বও যোগ হয়েছে। চট্টগ্রাম মহা-ধর্মপ্রদেশের নতুন ভিকার-জেনারেল হিসেবে কি কি করার পরিকল্পনা রয়েছে আপনার? 


তিনি বলেন, যাজকীয় জীবন সম্পূর্ণই সেবার জীবন। নিবেদিত জীবন। যিশুকে অনুসরণ করার জীবন। জনগণকে যিশুর পথে আনয়নের জীবন। আমি আমার বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানাই যাদের জন্য আমি এই সেবার জীবন বেছে নিয়েছি। আমি সব সময় চিন্তা করি, আমি কতটুকু নম্র হতে পেরেছি, কতটুকু বিনয়ী হতে পেরেছি। নিজেকে কতটুকু নিবেদিত করতে পেরেছি। নিজের ভেতর আহ্বান আবিষ্কার করার পর সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছি। আর সেই আহ্বানকে লালন করছি ও খ্রিস্টমণ্ডলীতে সেবারত আছি। 

ভিকার জেনারেল দায়িত্বটি একটি মাণ্ডলিক কাজ করার একটি পদ। আর মণ্ডলীর কাজ মানেই ঐশ্বরিক। ডিভাইন। এটা পবিত্র আত্মার কাজ। যদিও মণ্ডলীর কাজ জগতের সাথে জড়িত। আর এই সম্পৃক্ততার উদ্দেশ্য হলো মানুষের কল্যাণ করা। মঙ্গলের জন্য। দায়িত্বটি আমি পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। নতুন এই দায়িত্ব পাওয়ার পর যাজক হিসেবে আমার যে পালকীয় সেবাকাজগুলো আছে, সেগুলো পালন করার পাশাপাশি আমি জোর দিতে চাই: 


১. সর্বজনীন মণ্ডলী গড়তে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চাই;

২. মিলন সমাজ গড়তে চাই, জনগণের কথা শুনতে চাই;

৩. যাদের কাছে কেউ যায় না, তাদের কাছে যাবো ও তাদের কথা শুনবো;

৪. যুবাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। তাদেরকে মণ্ডলীকেন্দ্রীক করতে চাই;

৫. পুরাতন কিছু ঐতিহ্যকে ঝালাই করে নতুন করে উপস্থাপন করতে চাই;

৬. সবার সাথে, সবার মাঝে কাজ করতে চাই;

৭. যিশুর শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে চাই সবার মাঝে; 

এখানে একটি বিষয় আমাদের সবার জানা দরকার ভিকার জেনারেল মানে হলো সরাসরি বিশপের সহযোগী হিসেবে কাজ করা। সেই হিসেবে আমি আর্চবিশপ সুব্রত হাওলাদার সিএসসির একজন সহযোগী। তার পালকীয় ও অন্যান্য কাজের সহকারী। বিভিন্ন স্থানে তার প্রতিনিধিত্ব করা। আর্চবিশপ তিনি পোপ মহোদয়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন। সাধু পিতরের উত্তরসূরি। আর আমি একজন যাজক। আর আর্চবিশপ এবং যাজকের মধ্যে প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, যাজক বিশপের প্রতি বাধ্য থাকবে। তার কাজে সহায়তা করবে। আর্চবিশপ সুব্রত হাওলাদার সিএসসি তিনি তার বুদ্ধিদীপ্ত প্রজ্ঞা-বলে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। তার সাথে আমার পথচলা গুরু-শিষ্যের ন্যায় হবে। আর এটি আমাদের মণ্ডলীর পরম্পরা। যুগ-যুগ ধরে আমরা এই পরম্পরার মধ্যদিয়ে আসছি। পোপ মহোদয় আমাদের আহ্বান করেছেন একসাথে পথ চলতে, যাতে আমরা মিলন সমাজ গড়ে তুলতে পারি।  


প্রশ্ন : আপনার সেবার জীবনে আমারা দেখেছি আপনি বেশিরভাগ সময় গঠনগৃহে কাজ করেছেন। সেমিনারীয়ানদের সাথেই বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন। তাদের আহ্বান জীবন লালন করেছেন। ভবিষ্যতে কি কোন পরিকল্পনা আছে? এই বিষয়ে কিছু শুনতে চাচ্ছি :


এটি খুব ভালো একটি বিষয়। মূলত, আমি আমার ভালোবাসার দিক থেকে সেবাকাজের এদিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আমি বনানী সেমিনারীতে থাকাবস্থায়ই এই কাজটিকে আমার ভালোবাসার একটি কাজ হিসেবেই বেছে নিয়েছিলাম। আমার ভালোবাসার কাজের তালিকা ছাড়াও অন্যান্য অনেক সেবাকাজ আছে। তবে, এই ভাবি যাজকদের নিয়ে কাজ করাটা আমাকে অনেক আনন্দ দেয়। আর সেই ভালোবাসার ফল পাই প্রতিনিয়ত। অনেকজন যাজক হয়েছেন। আবার অনেকজন যাজক হতে পারেননি। যারা যাজক হতে পারেননি, তাদের সাথেও প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হয়। যারা যাজক হতে পেরেছেন, তাদের অভিনন্দন জানাই। যারা হতে পারেননি তাদের প্রতিও শুভকামনা। আমি তাদের বিষয়েও ইতিবাচক ধারণা পোষণ করি। তারা যাজক হতে পারেনি, তাতে কোন সমস্যা নেই। বরং তারা তাদের আহ্বান আবিষ্কার করতে পেরেছে সেটা বড় বিষয়। যাজকীয় জীবনের আহ্বান সবার জন্য নয়।  


শেষের কথা : আমাদের তুলনা করা উচিত না। পোপ মহোদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মিলন সমাজ গড়তে হবে আমাদের। যুবাদের নিয়ে কাজ করতে হবে প্রচুর। কারণ তারাই মণ্ডলীর প্রাণ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে আমাদের আরো ভূমিকা রাখতে হবে। 


জীবন ও সমাজকে এবং অন্যান্য সবাইকে ধন্যবাদ দেই, আমাকে প্রতিনিয়তই শুভেচ্ছা দেয়ার জন্য। আমি জীবন ও সমাজ অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে সবার কাছে প্রত্যাশা রাখি, সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করবেন, আমি যাতে আমার দায়িত্বগুলো নম্র ও বিনীতভাবে পালন করে যেতে পারি। সবাইকে ধন্যবাদ।


[জীবন ও সমাজে- পাঠাতে পারেন আপনারও বস্তুনিষ্ঠ লেখা প্রবন্ধ, গল্প ও ফিচার। 
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : jibonoshomaj@gmail.com ] 



Post a Comment

Previous Post Next Post